বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু হ্রাসে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। ২০০৮ সালে ইউনিসেফ প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা যায়, ১৯৯০ সালে এদেশে শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ১৪৯জন, ২০০৬ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৬৯জনে। ২০০৮ সালে শিশুমৃত্যুর হার আরো হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৫২জনে। ২০১৬ সালে শিশুমৃত্যু হার আরো হ্রাস পেয়ে হয় ২৮জন। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি ১০০০ জীবন্ত জন্মে শিশুমৃত্যু ঘটে ২০জন। সুতরাং বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেলেও উন্নত দেশসমূহের তুলনায় এ হার অনেক বেশি।
শিশুমৃত্যুর কারণ
বাংলাদেশের অনেক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। ফলে মা ও শিশু সঠিক স্বাস্থ্য সেবা, পরিচর্যা পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মূলত দারিদ্র্যের কারণেই শিশুদের একটা অংশ মৃত্যুবরণ করে। তাছাড়া এদেশে এখনও বাল্যবিবাহের প্রচলন রয়েছে। ফলে অল্প বয়সে গর্ভধারণ করায় সন্তান দুর্বল ও পুষ্টিহীন হয়। অনেক সময় শারীরিক জটিলতায় এসব শিশু মৃত্যুবরণ করে। এখনও এদেশে গ্রাম্য প্রশিক্ষণহীন ধাত্রীর হাতে সন্তান প্রসব হয় যা শিশুমৃত্যুর হার বাড়িয়ে দেয়। আবার মায়ের অপুষ্টি ও অসুস্থতার কারণে অনেক সময় শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে। অপুষ্টির কারণে বিভিন্ন রোগ হয়। ফলে অনেক শিশু মৃত্যুবরণ করে।
আমাদের দেশে হাম, পোলিও, যক্ষ্মা, ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া ও হুপিং কাশি প্রভৃতি রোগে শিশুমৃত্যুর হার কমলেও এখনও এর প্রভাব কোনো কোনো অঞ্চলে রয়েছে। এর কারণেও শিশুমৃত্যুর হার বাড়ছে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অভাব, গ্রাম ও শহরের চিকিৎসা সুযোগ সুবিধার তারতম্যের কারণে এদেশে গ্রামীণ এলাকায় শিশুমৃত্যুর হার বেশি। তাছাড়া অশিক্ষা, অজ্ঞতা, কুসংস্কার এবং অবহেলার কারণেও শিশু মৃত্যু ঘটে থাকে। এদেশের ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও শিশুর মৃত্যু ঘটে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল এ ঘূর্ণিঝড়ে ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় ১,৩৮,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিল যার শতকরা ৫০ ভাগই ছিল শিশু।
শিশুমৃত্যুর প্রভাব
পরিবারে শিশুমৃত্যুর ঘটনা খুবই দুঃখজনক। পরিবারে শিশুমৃত্যুর ঘটনার সাথে আমরা কেউ কেউ পরিচিত। একটি পরিবারে যখন একটি শিশু মারা যায় তখন ঐ পরিবার অনেকটা অগোছালো হয়ে যায়। এই পারিবারিক শোক সামলানো কষ্টকর হয়ে পড়ে।
শিশুমৃত্যুর উচ্চ হার দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও বাধা সৃষ্টি করে। শিশুর মৃত্যুজনিত কারণে পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে। যা পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির স্বাভাবিক কাজ কর্মে বাঁধার সৃষ্টি করে। ফলে পরিবারটিও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই আমাদের শিশুমৃত্যু বিষয়ে সচেতন হতে হবে। শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
কাজ-১: তোমার এলাকায় মাতৃমৃত্যুর কারণ চিহ্নিত কর। কাজ-২: তোমার এলাকায় শিশুমৃত্যুর কারণ চিহ্নিত কর। |
common.read_more